ঢাকা,বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

পরিবেশ উপদেষ্টা বরাবরে বাপার স্মারকলিপি 

কক্সবাজরে ৫১ একর আবাসন ও বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করতে 

কক্সবাজার শহরের কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের পূর্ব পাশে পাহাড়ের উপর বন বিভাগের জমির উপর   গড়ে তোলা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন প্রকল্পের আলোচিত ৫১ একরে চলছে জমি কেনাবেচা ও বহুতল ভবন নির্মাণ কার্যক্রম।
ফলে বাস্তবায়ন হচ্ছে না উচ্চ আদালতের নির্দেশ।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, পাহাড়ি বনভূমিতে আবাসনের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এই আইন ভঙ্গ করছেন খোদ জেলা প্রশাসকের সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গড়ে তুলছেন আবাসন প্রকল্প। প্রতিদিনই দেদার কাটা হচ্ছে পাহাড় অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে প্লট।
ঝিলংজা মৌজার আরএস ৮০০১ নম্বর দাগের ১২৪ একর রক্ষিত বন ও প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা থেকে ৫১ একর বনভূমি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলতে বরাদ্দ দেয় জেলা প্রশাসন। ওই বরাদ্দ বাতিল, পাহাড় ও বনজ সম্পদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিট করে। হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৮ জুন বরাদ্দ বাতিল, পাহাড়ের কোনো অংশ না কাটা, রক্ষিত বন এলাকায় সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা এবং বন ধ্বংস না করতে আদেশ দিয়ে রায় দেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিলংজা মৌজার ওই এলাকাকে ১৯৩৫ সালে রক্ষিত বন এবং ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ কারণে এলাকাটির পাহাড়ি বনভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করা ও পাহাড় বা বনভূমির ক্ষতিসাধন করা আইনানুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলা প্রশাসন কাজ শুরু করলে বন বিভাগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে, এমনকি আদালতে জেলা কালেক্টরেট কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়।

পরিবেশ প্রতিবেশ জীববৈচিত্র্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় বর্তমান সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার হিসাবে  গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের( বন-১) অধিশাখা থেকে বন অধিদপ্তরের স্মারক নং ২২.০১.০০০০.০১১.০৮.০৮১(৩য়খন্ড).২৩.৩ তারিখ ১৪/১/২০২৫ উপযুক্ত বিষয় স্মারকমূলে
সদর উপজেলাস্থ ঝিলংজা মৌজার আরএস ৮০০১ নং দাগের রক্ষিত বনভূমি হতে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা উচ্ছেদ করে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে অবহিত করতে জেলা প্রশাসক কক্সবাজারকে অনুরোধ জানান।
বন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব তুষার কান্তি পাল স্বাক্ষরিত উক্ত চিঠি সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলার ঝিলংজা মৌজার আরএস ৮০০১ নং দাগের ১২৪.৩৫ একর পাহাড় শ্রেণির ভূমি গেজেট নোটিফিকেশন নং Chittagong No 49 T for 11th June ১৯৩৫ মূলে রক্ষিত বন ( Protected Forest) হিসাবে ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি ব্যতীত ২০০৪ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ভূমি/ শা-৮/খাজব/৩৩২/২০০২/২৭ তারিখ ১১/১/২০০৪ মূলে উক্ত ঝিলংজা মৌজা আরএস দাগ ৮০০১ এর ৫১ একর রক্ষিত বনভূমি  জেলা কালেক্টরেট কর্মকর্তা কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ কক্সবাজারের  নামে আবাসন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।  উক্ত বনভূমির মূল্যবান ও বিলুপ্ত প্রজাতির  বৃক্ষ নিধন করে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট অন্যান স্থাপনা তৈরি করা হয়।
উল্লেখিত প্রেক্ষাপটে মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত ১১২১০/২০০৬ নং রিট মামলার ৮/৬/ ২০১১ তারিখের রায়ে বর্ণিত বনভূমি হতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ( Environmentally critical Area) ভূক্ত কোন জমি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বন্দোবস্ত না দেওয়ার জন্য বিবাদীদের প্রতি নির্দেশনা দেন। পরবর্তী ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং ভূমি/ শা-৮/খাজব/৮৫/২০০৬/১৫৬/১(৫) তারিখ ১৬/৪/২০০৭ মূলে জেলা কালেক্টরেট কর্মকর্তা কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের অনুকূলে  বন্দোবস্তকৃত ৫১.০ একর বনভূমি বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়। মহামান্য হাইকোর্টের ৮/৫/২০১১ তারিখের আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপীল  নং ৪৮২/২০১২ দায়ের করা হলে ২/২/২০১৫ তারিখে আপীলের আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখা হয়। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে সিভিল রিভিউ পিটিশন নং-৫৭/২০১৫ দায়ের করা হলেও গত ১৯ মার্চ২০১৭ তারিখ মহামান্য হাইকোর্টের আপীল বিভাগ খারিজের আদেশ দেন। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ৫১ একর ভূমিতে স্থাপিত সমস্ত স্থাপনা উচ্ছেদ/ অপসারণ সম্পন্ন হয়নি।
মহামান্য হাইকোর্টে দায়েরকৃত ১১২১০/২০০৬ নং রিট মামলার ৮/৬/ ২০১১ তারিখের রায় অনুযায়ী ঝিলংজা মৌজা আরএস দাগ ৮০০১ এর ৫১ একর রক্ষিত বনভূমি হতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পূর্বক বন পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে জেলা প্রশাসক কক্সবাজারকে অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু দুঃখের বিষয় আলোচিত ৫১ একর বনভূমি রক্ষায় পাহাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের চিঠি প্রধান করা হলেও তিন মাসেও তার কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা না যাওয়ার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা নেতৃবৃন্দ হতাশ হয়েছে।
এমতাবস্থায় উচ্চ আদালতের রায় দ্রুত  বাস্তবতা করে  ৫১ একরের আবাসন প্রকল্পটির সমস্ত স্থাপনা  উচ্ছেদ করে বনের জায়গা বন বিভাগকে ফিরিয়ে দিতে দ্রুত  ব্যবস্থা করে উচ্ছেদ পরবর্তী  উক্ত আলোচিত ৫১ একর সংরক্ষিত  বনভূমিতে বোটানিক্যাল গার্ডেন করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য  বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
একই সাথে কক্সবাজারের প্রাণ বাঁকখালী নদী দখল দূষণ মুক্ত করতে নদীর সীমানা নির্ধারণ ও নদীতে অবৈধ ড্রেজিং বন্ধ ও নদী দখলবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সুদৃষ্টি কামনা করে ১৬ এপ্রিল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা কক্সবাজার জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাপা কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক  এইচ এম এরশাদ, সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম,সদর উপজেলা বাপার সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী, জেলা বাপার সংগঠক মোহাম্মদ মেক্স, রুহুল কাদের শিলু আমিন উল্লাহ, আমান উল্লাহ, এম কামরুল হাসান, ইফাজ উদ্দিন ইমু, মুহাইমিন উল্লাহ রামিম প্রমুখ।

পাঠকের মতামত: